২০২৪ সালে কোর ওয়েব ভাইটালস: LCP, INP, CLS, সমস্যা ও সমাধান

ইন্টারনেটের বর্তমান যুগে ওয়েবসাইটের গতি, স্থিতিশীলতা, এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গুগল এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে একটি নতুন মানদণ্ড প্রবর্তন করেছে, যার নাম “কোর ওয়েব ভাইটালস”। এই মানদণ্ডগুলো ওয়েবসাইটের কার্যকারিতা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে। কোর ওয়েব ভাইটালস মূলত তিনটি প্রধান সূচকে বিভক্ত: LCP (Largest Contentful Paint), INP (Interaction to Next Paint), এবং CLS (Cumulative Layout Shift)।

LCP (Largest Contentful Paint) কী?

LCP-এর সংজ্ঞা:

LCP হলো সেই মেট্রিক্স যা একটি ওয়েবপেজের মূল উপাদানটি লোড হতে কতক্ষণ সময় নিচ্ছে তা মাপা হয়। মূলত, ওয়েবপেজের বৃহত্তম উপাদানটি (যেমন বড়ো ছবি, ভিডিও, বা বড়ো ব্লক টেক্সট) পুরোপুরি দৃশ্যমান হতে যত সময় লাগে সেটাই LCP।

LCP-এর ভালো স্কোর:

গুগল সুপারিশ করে যে, LCP ২.৫ সেকেন্ড বা তার কম হওয়া উচিত। এর থেকে বেশি হলে ওয়েবপেজটি ব্যবহারকারীর জন্য ধীরগতির মনে হবে।

LCP উন্নয়নে যেসব সমস্যা দেখা যায়:

  1. ধীর সার্ভার প্রতিক্রিয়া সময়:
    • সমস্যা: উচ্চ সার্ভার ল্যাটেন্সি এবং সার্ভারের অনুকূলিত পারফরম্যান্স না থাকা।
    • সমাধান: দ্রুত সার্ভার ব্যবহার করা, সার্ভার-সাইড ক্যাশিং প্রয়োগ করা এবং কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (CDN) ব্যবহার করা।
  2. রেন্ডার-ব্লকিং রিসোর্স:
    • সমস্যা: CSS, JavaScript এবং ফন্ট যা পেজের কন্টেন্ট রেন্ডার হওয়ার সময় ব্লক করে।
    • সমাধান: CSS এবং JavaScript ফাইলগুলোকে মিনিমাইজ, ডিফার বা অ্যাসিঙ্ক্রোনাসলি লোড করা। গুরুত্বপূর্ণ CSS ইনলাইন করা এবং কী রিসোর্সগুলো preload করা।
  3. বড়ো এবং অপ্টিমাইজ না করা ইমেজ:
    • সমস্যা: বড়ো এবং অতিরিক্ত রিসোর্সসাধ্য ইমেজ ব্যবহার করা।
    • সমাধান: ইমেজগুলোকে কম্প্রেস করা, নতুন জেনারেশনের ফরম্যাট (যেমন WebP) ব্যবহার করা এবং ডিভাইস অনুযায়ী উপযুক্ত সাইজের ইমেজ সার্ভ করা।
  4. ক্লায়েন্ট-সাইড রেন্ডারিং (CSR) সমস্যা:
    • সমস্যা: শুধুমাত্র ক্লায়েন্ট-সাইড রেন্ডারিং ব্যবহার করা এবং সার্ভার-সাইড রেন্ডারিং (SSR) ব্যবহার না করা।
    • সমাধান: SSR বা স্ট্যাটিক সাইট জেনারেশন (SSG) ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর কাছে প্রি-রেন্ডার করা কন্টেন্ট সরবরাহ করা।
  5. ধীর রিসোর্স লোড টাইম:
    • সমস্যা: ধীরে লোড হওয়া ফন্ট, স্ক্রিপ্ট বা স্টাইলশীট।
    • সমাধান: রিসোর্সগুলোকে অপ্টিমাইজ, কম্প্রেস এবং preconnect, preload, বা prefetch কৌশল ব্যবহার করে লোড করা।
  6. অতিরিক্ত থার্ড-পার্টি স্ক্রিপ্ট:
    • সমস্যা: অনেক বেশি থার্ড-পার্টি স্ক্রিপ্ট (যেমন অ্যাড, অ্যানালিটিক্স)।
    • সমাধান: থার্ড-পার্টি স্ক্রিপ্টগুলোর ব্যবহার সীমিত করা, বা এগুলোকে প্রধান কন্টেন্ট লোড হওয়ার পরে অ্যাসিঙ্ক্রোনাসলি লোড করা।
  7. এবাভ-দ্য-ফোল্ড কন্টেন্টকে প্রাধান্য না দেওয়া:
    • সমস্যা: বড়ো কন্টেন্টফুল এলিমেন্টকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্য কন্টেন্টগুলোকে প্রথমে লোড করা।
    • সমাধান: বড়ো কন্টেন্টফুল এলিমেন্ট (যেমন ইমেজ বা হেডিং) প্রথমে লোড করা এবং প্রাধান্য দেওয়া।

Core Web Vital

LCP-এর সমস্যা সমাধান:

এই সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে LCP স্কোর উন্নত করা সম্ভব, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করবে এবং সার্চ ইঞ্জিন র‌্যাংকিংয়ে সহায়ক হতে পারে।

INP (Interaction to Next Paint) কী?

INP-এর সংজ্ঞা:

INP হলো সেই মেট্রিক্স যা ব্যবহারকারীর প্রথম ইন্টারঅ্যাকশন এবং সেই ইন্টারঅ্যাকশনের পর ওয়েবপেজের পরবর্তী রেন্ডার হওয়ার মধ্যে কতটা সময় লাগে তা মাপা হয়। সাধারণভাবে, এটি ওয়েবসাইটের রেসপন্সিভনেস বা প্রতিক্রিয়াশীলতা মাপার জন্য ব্যবহৃত হয়।

INP-এর ভালো স্কোর:

গুগলের মতে, INP ২০০ মিলিসেকেন্ড বা তার কম হওয়া উচিত। এর থেকে বেশি সময় হলে ব্যবহারকারীকে ওয়েবসাইট ধীরগতির মনে হবে।

INP উন্নয়নে যেসব সমস্যা দেখা যায়:

  1. লম্বা JavaScript এক্সিকিউশন টাইম:
    • সমস্যা: ভারী এবং অপ্টিমাইজ না করা JavaScript কোড যা এক্সিকিউট করতে বেশি সময় নেয়।
    • সমাধান: বড়ো JavaScript টাস্কগুলোকে ছোট ছোট, অ্যাসিঙ্ক্রোনাস টাস্কে ভাগ করা এবং Web Workers ব্যবহার করা।
  2. অনুকূলিত না হওয়া প্রধান থ্রেড কাজ:
    • সমস্যা: প্রধান থ্রেডে অতিরিক্ত কাজ (যেমন জটিল ক্যালকুলেশন বা DOM ম্যানিপুলেশন)।
    • সমাধান: ভারী ক্যালকুলেশনগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ড থ্রেডে সরানো, DOM রিফ্লো কমানো এবং রেন্ডারিং অপ্টিমাইজ করতে requestAnimationFrame কৌশল ব্যবহার করা।
  3. ব্লকিং JavaScript বা CSS:
    • সমস্যা: JavaScript বা CSS যা ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন ব্লক করে বা বিলম্বিত করে।
    • সমাধান: অপ্রয়োজনীয় JavaScript এবং CSS অ্যাসিঙ্ক্রোনাসভাবে লোড করা এবং স্ক্রিপ্টগুলো ডিফার বা লেজি লোড করা।
  4. অপ্রয়োজনীয় পুনরায় রেন্ডারিং:
    • সমস্যা: খারাপ কোডিং প্র্যাকটিসের কারণে ফ্রিকোয়েন্ট রেন্ডারিং।
    • সমাধান: React বা Vue কম্পোনেন্টগুলোকে অপ্টিমাইজ করা, মেমোয়াইজেশন ব্যবহার করা এবং অপ্রয়োজনীয় স্টেট আপডেট এড়ানো।
  5. ভারী বা অপ্টিমাইজ না করা অ্যানিমেশন:
    • সমস্যা: জটিল, রিসোর্স-ইনটেনসিভ অ্যানিমেশন যা প্রধান থ্রেডে চলে।
    • সমাধান: যতটা সম্ভব CSS অ্যানিমেশন ব্যবহার করা এবং GPU-এক্সেলারেটেড অ্যানিমেশন নিশ্চিত করা।
  6. অতিরিক্ত থার্ড-পার্টি স্ক্রিপ্ট:
    • সমস্যা: অতিরিক্ত থার্ড-পার্টি স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা যা ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশনের সাথে সমস্যা সৃষ্টি করে।
    • সমাধান: থার্ড-পার্টি স্ক্রিপ্টগুলোর ব্যবহার সীমিত করা বা এগুলোকে প্রধান ইন্টারঅ্যাকশন প্রক্রিয়াকরণের পরে লোড করা।
  7. অকার্যকর ইভেন্ট লিসেনার:
    • সমস্যা: অকার্যকর বা অপ্রয়োজনীয় ইভেন্ট লিসেনার অ্যাড করা, বিশেষ করে বেশি ব্যবহৃত এলিমেন্টগুলোর উপর।
    • সমাধান: প্যাসিভ ইভেন্ট লিসেনার যেখানে প্রযোজ্য সেখানে ব্যবহার করা এবং প্রয়োজন শেষ হলে ইভেন্ট লিসেনার সরানো।
কোর ওয়েব ভাইটাল 2024 বাংলার সম্পূর্ণ প্লেলিস্ট এখানে রয়েছে :

INP-এর সমস্যা সমাধান:

এই সমস্যাগুলো এড়িয়ে ওয়েবসাইটের ইন্টারঅ্যাকশনের প্রতিক্রিয়া দ্রুত, কার্যকরী এবং ব্যবহারকারীর জন্য আরো মসৃণ করা সম্ভব।

CLS (Cumulative Layout Shift) কী?

CLS-এর সংজ্ঞা:

CLS হলো সেই মেট্রিক্স যা একটি ওয়েবপেজে অপ্রত্যাশিত লেআউট পরিবর্তন কতটা ঘটে তা মাপা হয়। এটি তখন ঘটে যখন একটি ওয়েবপেজে লোডিংয়ের সময় ছবির আকার পরিবর্তন, অ্যাড লোড হওয়া, বা অন্যান্য কন্টেন্ট ডায়নামিকভাবে লোড হওয়ার ফলে লেআউট পরিবর্তিত হয়।

CLS-এর ভালো স্কোর:

গুগলের মতে, একটি ভালো CLS স্কোর ০.১ বা তার কম হওয়া উচিত। এর থেকে বেশি হলে এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে নষ্ট করে দিতে পারে।

CLS উন্নয়নে যেসব সমস্যা দেখা যায়:

  1. আকারহীন ইমেজ এবং ভিডিও:
    • সমস্যা: ইমেজ এবং ভিডিও যেগুলোর জন্য আকার নির্দিষ্ট করা নেই।
    • সমাধান: HTML বা CSS এ ইমেজ এবং ভিডিওর জন্য আকার নির্দিষ্ট করা।
  2. অপ্রয়োজনীয় অ্যানিমেশন এবং ট্রান্সিশন:
    • সমস্যা: অপ্রয়োজনীয় অ্যানিমেশন এবং ট্রান্সিশন যা লেআউট শিফ্ট ঘটায়।
    • সমাধান: অ্যানিমেশন এবং ট্রান্সিশনগুলোকে সীমিত করা, বিশেষ করে ভিজ্যুয়াল স্ট্যাবিলিটির উপর প্রভাব ফেলে এমনগুলো।
  3. ডায়নামিক কন্টেন্ট ইনজেকশন:
    • সমস্যা: পেজ লোড হওয়ার সময় ডায়নামিকভাবে কন্টেন্ট যোগ করা যা লেআউট শিফ্ট সৃষ্টি করে।
    • সমাধান: কন্টেন্ট লোড হওয়ার সময় জায়গা ধরে রাখা এবং ইনলাইন স্টাইলিং ব্যবহার করা।
  4. আকারহীন বিজ্ঞাপন এবং এম্বেডেড কন্টেন্ট:
    • সমস্যা: বিজ্ঞাপন এবং এম্বেডেড কন্টেন্ট যা লোড হওয়ার সময় আকার পরিবর্তন করে।
    • সমাধান: বিজ্ঞাপন এবং এম্বেডেড কন্টেন্টের জন্য সঠিক সাইজ সংজ্ঞায়িত করা।

CLS-এর সমস্যা সমাধান:

এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ওয়েবসাইটের ভিজ্যুয়াল স্ট্যাবিলিটি এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করা সম্ভব।

উপসংহার:

২০২৪ সালে, কোর ওয়েব ভাইটালস ওয়েবসাইটের কার্যকারিতা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। LCP, INP, এবং CLS এই তিনটি প্রধান সূচকের উপর নজর দিয়ে ওয়েবসাইটের গতি, রেসপন্সিভনেস এবং ভিজ্যুয়াল স্ট্যাবিলিটি উন্নত করা সম্ভব। উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলো এড়িয়ে এবং সমাধানগুলো প্রয়োগ করে, আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে গুগল সার্চ র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে রাখতে সক্ষম হবেন এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে পারবেন।